ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার সময় আশপাশের যেসব পয়েন্টে যানজট হয়, সেগুলোয় আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে মালিকপক্ষ।
ঈদে বাড়ি ফিরতে রাজধানীর কোটি মানুষ মোটা দাগে যে পাঁচটি সড়ক ব্যবহার করেন, তার মধ্যে ঢাকা-সিলেট ছাড়া বাকিগুলোয় যানজটের তেমন আশঙ্কা দেখছেন না যানবাহনের চালক, মালিক বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ঢাকা-সিলেট নিয়ে ভয়ের কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সড়কটি এমনিতেই সরু। এর মধ্যে কোনো কোনো জায়গা খানাখন্দে ভরা; কোথাও কোথাও আবার চলছে ছয় লেনের কাজ। সড়কের পাশে বাজার ও কারখানার পাশাপাশি আছে অটোরিকশার উৎপাতও।
সড়ক নির্মাণের কাজ চলায় উত্তরাঞ্চলের পথে কিছুটা যানজট হতে পারে এলেঙ্গায়। নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কারণে একই ঝুঁকি আছে গাইবান্ধাতেও।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লায় যানজটের ১২ ‘হটস্পট’ ছাড়া ভয়ের কিছু দেখছেন না চালক-যাত্রীরা। ময়মনসিংহের পথে ভোগান্তি হতে পারে ১৫ স্থানে। যদিও গাজীপুর অংশ নির্বিঘ্ন রাখতে তোড়জোড় চলছে। যানজট নিয়ে সবচেয়ে নির্ভার দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা।
এসব পথের যানজট কমাতে টোলপ্লাজাগুলোয় জনবল বাড়ানোসহ কিছু উদ্যোগ নেওয়ার তথ্য দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার সময় আশপাশের যেসব পয়েন্টে যানজট হয়, সেগুলোয় আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে মালিকপক্ষ।
ঢাকার টার্মিনালগুলোতেও ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হয়েছে। ঈদের আগে-পরে সাতদিন ট্রাক ও কভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রাখার কথা বলেছে পুলিশ। সব মিলিয়ে স্বস্তির ঈদযাত্রা প্রত্যাশা করছেন তারা।

ঢাকা-সিলেট সড়ক নিয়ে বেশি ভয়
ঈদযাত্রায় যানজটের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি করছেন ঢাকা-সিলেট সড়কের চালক-যাত্রীরা।
ঢাকা-হবিগঞ্জ পথের মিতালী পরিবহনের চালক ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, এমনিতে এটা ‘সিঙ্গেল’ (উভয়মুখী) রোড। ভৈরব সেতু থেকে খানাখন্দে ভরা সরু সড়কের কারণে যানজট লেগেই থাকে।
“এর মধ্যে ঢাকা থেকে নরসিংদীর প্রায় পুরো সড়কেই নানা বাজার ও কারখানা। অটোরিকশার উৎপাতও আছে।”
নরসিংদীর এসপি আব্দুল হান্নান বলেন, ছয় লেনের কাজ চলমান থাকায় এ মহাসড়কের চিত্র এবার অনেকটা ভিন্ন। রোজার শুরু থেকেই নিয়মিত জনবলের সঙ্গে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা।
তিনি বলেন, “মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধের জন্য মাইকিং করাসহ ট্রাফিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
“এ ছাড়া মহাসড়কে চলমান সংস্কার কাজের জন্য বিকল্প রাস্তা সংস্কারের জন্য ঠিকাদারদের অনুরোধ করা হয়েছে।”
চন্দ্রা পর্যন্ত ‘স্বস্তি’ চান উত্তরার চালকরা
উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ বাস ঢাকা ছাড়ে গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনাল থেকে। অন্যান্য ঈদের সময় এসব বাসকে গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত পৌছানোর আগেই বেশ কিছু স্থানে যানজটে পড়তে হয়।
ঢাকা-কুড়িগ্রাম পথের বাসচালক আজিজুল হক ভোলা বলেন, “উত্তরের পথে রাস্তা ভালোই। গাবতলী সেতুর ক্রসিংয়ে আগে যে যানজট হত, এখন সেখানে প্রশস্ত সড়ক হয়েছে; থামার কোনো বালাই নেই।
“তবে আশুলিয়া থানা এলাকার বাইপাইল এবং গাজীপুরের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা মোড়ে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মোটামুটি এ পথে যমুনা সেতুর আগ পর্যন্ত আর কোন ঝামেলা নেই। দ্রুত টোল আদায়ে বিশেষ ব্যবস্থা না নিলে সেখানে যানজট ঠেকানো কঠিন।”

আজিজুলের ভাষ্য, “বগুড়ায় কয়ডা সিঙ্গেল রোড আছে। আর ভেজালটা লাগে গোবিন্দগঞ্জ যায়া। বড় রাস্তা হঠাৎ সরু হইছে, রাস্তাও ভাঙাচুরা। এইখানে জ্যাম একেবারে মাস্ট। এখন পুলিশ যদি অটোরিকশা, দোকানপাট খেদায় দিতে পারে তাহলে কিছু সুবিধা হয়।”
গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মোজাফ্ফর হোসেন বলছেন, “গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীর যানজট নিয়ন্ত্রণে হাইওয়ে পুলিশ, থানা পুলিশ, জেলা ট্রাফিক পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বিত ১০টি করে টিম কাজ করছে।”
ঈদের মহাসড়কে ডাকাতি বা দুস্কৃতিকারীদের কোন আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে বাসচালক আজিজুল বলেন, “কয়েক দিন আগে এরকম শুনতেছিলাম। ঢাকার আশুলিয়া, গাজীপুরের টঙ্গী বা বোর্ডবাজার এলাকায় যানজটে আটকে যাওয়া গাড়িগুলাতে কিছু পোলাপাইন অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে উৎপাত করছে।
“যমুনা ব্রিজের আগে-পরে এরকম কয়েকটা ঘটনা ঘটছে শুনছি। তবে এখন মনে হয় এগুলা কিছুটা বন্ধ হইছে। বেশ কিছুদিন কিছু শুনি না। আর ঈদের হাইওয়েতে অনেক গাড়ি থাকে; পুলিশও থাকে প্রচুর। এরকম কিছু হওয়ার কথা না।”
মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি দেলোয়ার হোসেন মিঞা বলেন, “পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মাঝখানে এসব ঘটনা তো অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তবে এখন কমেছে। গত সাত দিনে এমন কিছু শোনা যায়নি।
“সড়কে পুলিশ তৎপর রয়েছে। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা গভীর রাত পর্যন্ত মাঠে থাকছেন। আমরা আশা করছি এবার এমন কিছু ঘটবে না। ইনশাল্লাহ সবাই নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরবে।”
যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “উত্তরাঞ্চলে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মোড় এবং চন্দ্রায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। আমরা সবদিক থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। গতবার তো একটু (যানজটে) কষ্ট হয়েছিল। সেখান থেকে আমরা শিখছি।”

গতি বাড়াতে হবে টোল আদায়ে
ঢাকা-চট্টগ্রাম পথের বাসগুলোর সাইনবোর্ড পর্যন্ত যেতেই অনেকটা সময় চলে যায়। চালকরা বলছেন, মূল সড়কে রিকশা চলে আসার কারণে বেশি ভুগতে হয় তাদের।
ঢাকা-চট্টগ্রাম পথের সিডিএম পরিবহনের বাসচালক নওশাদ বলেন, “সাইনবোর্ড ও কাঁচপুর সেতু এলাকায় রিকশাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। লোকাল বাসগুলো যেন সড়ক আটকে দাঁড়িয়ে না থাকে।
“মেঘনা সেতুর টোল প্লাজায় যানজট লেগেই থাকে। এখানে বাড়তি লোকজন দিয়ে টোলের টাকাটা দ্রুত নিয়ে নিতে পারলে ভেজাল একটু কমে। এছাড়া সড়কের ওপর অনেক জায়গায় বাজার আছে।”
হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের এসপি খায়রুল আলম বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কুমিল্লা রিজিয়নে ৮ শতাধিক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
“রোভার স্কাউটের স্বেচ্ছাসেবকরাও থাকবেন । তাদের আলাদা পোশাকও দেওয়া হয়েছে, যেন দায়িত্বপালনের নামে কেউ চাঁদাবাজি বা অনিয়ম করতে না পারে।”

‘বের হওয়াটা’ স্বস্তিদায়ক করার চেষ্টা
ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সম্পাদক সাইফুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে ঢাকার আশপাশে যেসব জায়গায় যানজট হয়, সেগুলোর তালিকা আমরা পুলিশকে দিয়েছি। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছে, তারা সেসব জায়গা জোরালো ব্যবস্থাপনার আওতায় আনবে।
“ঢাকার আশপাশ যেমন আশুলিয়া, চন্দ্রা, নরসিংদীর বেলাবো, কাঁচপুর, শনিরআখড়া, মূড়াপাড়া বাইপাস- এসব জায়গায় পুলিশের পাশাপাশি আমাদের লোকও সতর্ক থাকবে। আশা করছি, এসব পথে যানবাহন নির্বিঘ্নে যাওয়া-আসা করতে পারবে।”
সাইফুল বলছেন, “ঢাকার টার্মিনালকেন্দ্রিক যানজট এড়াতেও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আর এবারের ছুটিটাও লম্বা। লোকজন আগে থেকেই যাওয়া শুরু করেছেন। ফলে খুব যানজট হবে- এমনটা আমরা ভাবছি না।”

হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (মিডিয়া) মো. শামসুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমনিতে এবার আমরা যানজটের তেমন আশঙ্কা দেখছি না। তবে ২৫ তারিখ থেকে ট্রাক চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বোঝা যাবে গাড়ির চাপ কতখানি।
“উত্তরের রাস্তাঘাট ভালোই আছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ অঞ্চলেও রাস্তা ভালো আছে। আমাদেরও পুরো প্রস্তুতি আছে। আশা করছি সমস্যা হবে না।”
তবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ছয় লেনের কাজ চলায় কিছু এলাকায় দুর্ভোগের শঙ্কা রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ঢাকা সিলেট হাইওয়েতে কাজ চলছে। সেখানে সড়ক সরু হয়ে এসেছে, কিছু ভাঙাচোরাও আছে। সব মিলিয়ে এখানে দুর্ভোগের একটা আশঙ্কা রয়ে গেছে।”
টোল আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, “টোলপ্লাজাগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের আগাম মিটিং হয়েছে। আমরা বলেছি লোকবল বাড়াতে, যেন দ্রুত টোল আদায় করা যায়।”
News —bdnews24.com